সুইডেনের পথে, ICSE এর সাথে - পর্ব ১

Written on June 27, 2018

দোহার এয়ারপোর্টে যাত্রাবিরতীর সময়

এখানে আকাশ পথে আসার সময় যথারীতি কি পান করবো জিজ্ঞাসা করলে আমার উত্তর আপেল জুস আর আমের জুসেই ছিল।

দোহা এয়ারপোর্ট

দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ আপেলের জুসের গ্লাস ফুটা ছিল, খেয়াল করিনি, প্যান্ট গেল ভিজে। পরে টিস্যু দিয়ে ডলাডলি করে সেরেছি। গরম বাতাসে শুকানোর ব্যবস্থা আছে নাকি জিজ্ঞাসা করায় এরা উত্তর দিলো আছে, কিন্তু হয় তোমার উপরে ঝুলে থাকতে হবে, নাহলে প্যান্ট খুলে উপরে ঝুলাতে হবে। দুঃখজনক ভাবে একটাও পছন্দ হয়নি। তবে এরা অনেকবার দুঃখ প্রকাশ করে টিস্যু সাপ্লাই দিয়েছে বলে আর কিছু বলি নাই।

যাবার পথে দোহার হামাদ এয়ারপোর্টে ট্রানজিট লাগে প্রায় ৪ঘন্টা। বেশ পরিষ্কার, তকতকে। ফ্রী ইন্টারনেটও আছে। তবে সম্ভবত এখানের ইন্টারনেট দিয়ে কল দেয়া যায় না। স্কাইপ, ভাইবার বা ফেসবুকের কল কোনটাই কানেক্ট করে না, রিং হয় যদিও। ঢাকা এয়ারপোর্ট এর মত আউটলেটও নাই ফোনে চার্জ দেবার। কাজেই পাওয়ার ব্যাংকটাতেই ভরসা।

স্টকহোমের এয়ারপোর্টে যাত্রাবিরতীর সময়

ক্ষেত্রবিশেষে আমার কপাল যেমন অনেক খারাপ থাকে, তেমন আমার কপাল মাঝে মধ্যে সেই রকমের ভালো হয়ে যায়। সেসকল ক্ষেত্রে মনে হয় ঈশ্বর পাশা খেলেন না, ধরে পাশার দান বসান। আমাকেও তেমন ধরে এমন কোন জায়গায় বসান যার কারণে অনেক সুবিধা হয়ে যায়।

এই যেমন এখানে আসার সময় একটা চিন্তা ছিল মাথায় সবসময়। একা একা এই প্রথম বিদেশ যাচ্ছি। কোথায় কি করবো না করবো সেটার জন্য আগে যারা থাকতেন তাদের থেকে যথেষ্ট উপদেশ পেলেও এই একা যাওয়া নিয়ে একটা চিন্তা থেকে যাচ্ছিলো। মজার ব্যাপার, দোহায় নামার সময় প্লেনে একজন অনুরোধ করলেন উনার লাগেজটা একটু নিতে সাহায্য করতে। উনার কাঁধে এমন টান লেগেছে যে উনি চাকা লাগানো সেই লাগেজ একটু ঠেলতেও ব্যথা পাচ্ছেন।

উনার সেই অনুরোধ রাখতে গিয়ে গল্প করতে করতে বার হয়ে গেল আমাদের প্রিয় রাজু স্যারের বউ এর সাথে উনার স্বামীর পরিচয়, সেই সূত্রে উনি রাজু স্যারকেও চিনেন। থাকেন সুইডেনেই অনেক বছর। আলাপ করতে করতে উনি স্বামীকে (হাফিজ ভাই) জানিয়ে দিলেন আমার কথা, ছুটির দিন - উনি ট্রেনে এসে পড়লেন আমার জন্য সহ খাবার রান্না করে। স্টকহোম থেকে গোটেবর্গ এ যেতে প্রায় ৫ঘন্টা বিরতি, আমি কি করবো কি খাবো সে চিন্তায় এই ব্যবস্থা।

চিন্তা করে দেখুন, আমি যেভাবে এসেছি, যে ফ্লাইটে এসেছি, সেরকম অনেক ফ্লাইট ছিল। প্রতি ফ্লাইটে মানুষ থাকে শ খানেক। তাদের মাঝে একজনকে উনি অনুরোধ করলেন সাহায্য করতে, যার সাথে উনার পরিচিতদের পরিচয় আছে। তাও এমন দিনে পৌছালাম যেদিন ছুটির দিন বলে হাফিজ ভাইয়েরও রান্না করে আসতে কোন সমস্যা হলোই না! সুন্দর ভাবে ৫ঘন্টার ৩ ঘন্টা কেটেও গেল!

ভালো কথা, এখানে আসার সময় শুনি বলছে সুইডেনের তাপমাত্রা এখন ১০ডিগ্রি সেলসিয়াস। আমি তো শুনে মহা দুশ্চিন্তায় পরে গেলাম। গরম কাপড় সব তো প্লেনের লাগেজে, আমার কাছে নাই। করবো কি! ওমা, বার হয়ে দেখি মানুষ হাফ প্যান্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাপমাত্রা কম হলেও সূর্য সরাসরি তাপ দেয় বলে অত সমস্যা হয় না। এখানে নাকি সূর্য ডুবে রাত ১০টা বা ১১টার দিকে। শুনে আরেকবার খাবি খাবার পালা। এটা তো মনেই ছিল না। তার মানে আরো বেশি সময় ঘুরবো, আর আরো বেশি খিদা পাবে, বেশি খরচও হবে!

যাকগে, উনারা যাবার পরে বেশ মন খারাপ শুরু হলো। বাংলা বলার লোক নাই, কার সাথে বাংলা বলবো ইচ্ছা করলে এমন সব চিন্তা। সারাক্ষন মাতৃভাষার ভিতর থাকলে টের পাওয়া যায়না আসলে কিরকম লাগবে ব্যবহার করার সুযোগ না পেলে। স্টকহোম এর এয়ারপোর্টে ফ্রী ইন্টারনেট দেয় বলে সেটা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ মা আর প্রিয়ার সাথে আলাপ করে মন খারাপ কাটালাম। একটু পর দেখি কানেকশন নাই। বুঝলাম ওটার মেয়াদ একটিভ করা থেকে ৩ ঘন্টা সময় থাকে। এর পরে আর ব্যবহার করতে চাইলে কিনতে হবে। কিনতে হলে আবার অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড লাগবে। সেখানে আরেক ঝামেলা।

এখানে সুইডিশ ক্রোনাতে (মুদ্রার নাম) কিছু ডলার কনভার্ট করে নিলেও আগেই বুঝেছিলাম কয়দিন পরে ক্রোনা পাওয়া যাবে না। ক্রেডিট কার্ড দিয়েই সব কাজ করতে চায় ওরা। আমি ডুয়াল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড আনছি বলে সুবিধা হবে, কিন্তু আরেক সমস্যা হচ্ছে অনলাইনে কিছু কিনতে হলে আগে থেকে গেটওয়ে খোলা রাখতে হয়। ওটা করা হয়নি। সুতরাং ইন্টারনেট বিহীন ভাবে থাকতে হবে আপাতত। (কিনতে হলে ২জিবি ১ ঘন্টা ৪৯ ক্রোনা, আর ১০জিবি ২৪ ঘন্টা ১২৯ ক্রোনা। ১ ক্রোনা মানে প্রায় ১০ টাকা)

যাকগে, সুইডেনের ব্যাপারে আসি। এখানে স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ হয় প্রচুর। পাসপোর্ট নিয়ে ইমিগ্রেশন করে ঢুকতে গিয়ে দেখি দরজা লাগানো। কে খুলবে, ধাক্কা দেবার কোন কথা নাই কি করবো ভাবতে ভাবতে এগুতেই দেখি চিচিং ফাকের মতো দরজা খুলে গেল। একই কাহিনী বাথরুমের লাইট এ, পানিতে, সাবানের ফোম ডিস্পেন্সারে। তাতে হয় কি, পানি বা সাবান নষ্ট হয় না সহজে। আবার ডোমেস্টিক ফ্লাইটের জন্য যখন বোর্ডিং করবো, কিভাবে করবো তার জন্য একজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো তোমার বোর্ডিং পাস এখানে স্ক্যান করাও, গেট এমনিতেই খুলে যাবে। সাধারণত কারো জিজ্ঞাসাও করা লাগে না, ওরা এগুলো এভাবে করতেই অভ্যস্ত। আর মোবাইল এপস ব্যবহার করে অনেক। ওগুলো দিয়েই অনলাইনে চেক ইন, কেনাকাটা, টিকেট নেয়ার কাজ করে ফেলে।

এগুলো সব জেনেই এখানে এসেছি। যথেষ্ঠ প্রস্তুতি নিয়ে তারপরেও ঝামেলাতে পড়লাম কিছুক্ষণ পরেই। এমনই ঝামেলা যে মাথা ঘুরা শুরু করলো। আমার সবচেয়ে বড় ভয়টাই বুঝি সত্যি হতে চলেছে!

(গোটেবর্গ যাবার পথে, মে ২৬, বেলা ১২টায়)