গপ্পো - প্রাণী
প্রাণী বিজ্ঞান ক্লাসের অমিম হাত উঁচিয়ে তুললো: স্যার! প্রাণ থাকলেই কি প্রাণী বলে?
প্রিষম স্যার স্মিত হাসলেন, তারপরে বলা শুরু করলেন ধীরে ধীরে, তাঁর স্বভাব সুলভ গমগমে গলায়: খুবই ভালো প্রশ্ন করেছো। প্রাণ থাকলেই যদি প্রাণী হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে আমরা কি একটা প্রাণী হিসাবে নিজেদের বলতে পারি? আমাদের শরীরের প্রতিটা কোষের আলাদা জীবন আছে, এন্টিবডি আছে, আবার হজম প্রক্রিয়ায় অণুজীব আছে - তারা প্রত্যেকেই বাঁচে, মরে - আমরা বেঁচে থাকা অবস্থাতেই। তাহলে আমরা কি প্রাণী? নাকি আমরা প্রাণী সমষ্টি? কি মনে হয় তোমাদের?
ক্লাসের একটু ফাঁকিবাজ কানতু শুঁড় উচিয়ে বললো, স্যার আমরা মনে হয় দুইটাই। আমরাও প্রাণী, আমাদের কোষগুলোও প্রাণী। সবগুলাই প্রাণী।
প্রিষম স্যার হাসলেন, তারপরে বললেন - তোমার কথাটা ঠিক। সবগুলোই প্রাণী, আর প্রাণ থাকলেই আমরা প্রাণী বলছি। তবে আমাদের সাথে এই কোষগুলোর একটা ছোট্ট পার্থক্য আছে - সেটা হচ্ছে চিন্তা করার সক্ষমতা। যেমন ধরো আমাদের শরীরের যে কোষগুলো - সেগুলো কোন চিন্তা করতে পারে না। এগুলো বায়োপ্রোগ্রামড, কাজেই যা ইনপুট পায় সেটা অনুসারে কাজ করে। নিজেরা কোন সিদ্ধান্ত নেয় না, বা তার বাইরেও যেতে পারে না। আমরা কিন্তু তা করি না, যেমন আমরা সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিবো নাকি নিবো না সেটা আমরা ভেবে সিদ্ধান্ত নেই। দরকার না হলে নেই না। আবার দরকার হলেও অনেক সময় নেই না, এই চিন্তা করতে পারি বলেই।
ক্লাসের শান্ত শিষ্ট রিমেন, বরাবরই কম কথা বলে। কিন্তু সে এন্টেনা বড় বড় করে শুনছিলো এতক্ষন স্যারের কথা আর ভাবছিলো। তর সইতে না পেরে বলেই ফেললো, স্যার - তাহলে কি ছোট প্রাণী মানেই অচিন্তাশীল আর বড় হলে চিন্তাশীল?
প্রিষম স্যার একটু থেমে গেলেন। তারপর ভাবলেন, একবার পরখ করে নিলেন ক্লাসের সবার অবস্থা কেমন, একটু তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তন করলেন যেনো বাচ্চারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তার পরের কথাগুলো শুনে। শুরু করলেন তারপর:
অনেক প্রাণী আছে এই বিশ্বে যাদের দেখতে চিন্তাশীল মনে হয়। কিন্তু তারা চিন্তাশীল না। যেমন দুপেয়ে এক রকম প্রাণী আছে পৃথাবা নামক গ্রহে, আমাদেরই দুধসর গ্যালাক্সিতে - ওদের সভ্যতা আপাতদৃষ্টিতে খুবই উন্নত। কিন্তু ওরা চিন্তা করে না। পিঁপড়া যেমন কয়েকটা মারা গেলেও প্রভাব থাকে না, নিজেদের কাজ নিজেরা করতেই থাকে এরাও তেমন। ওদের ওখানে যখন রোগের মহামারি শুরু হলো - তখন তারা পারতো ঠিকমতো ব্যবস্থা নিতে, রোগীদের আলাদা করতে, তাদের যত্ন নিতে যেন তাদের সমস্যা না হয়। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে স্বাস্থ্য আর শিক্ষাব্যবস্থায় যেন সবাই জানতো এ ধরণের সময়ে কী করা লাগে, আর কী করা দরকার। যেমনটা আমরা দেই। কিন্তু তা না করে তারা নিজেদের যে কাজ তাই করেই যাচ্ছিলো, চিন্তা করেনি কীকরা জরুরী। ইতিহাস থেকে শিক্ষাও নেয়নি। সভ্যতা হিসাবে তারা ব্যর্থ এ যায়গাটাতেই। আর ঠিক এখানেই আমাদের সাথে তাদের পার্থক্য।
তারা চিন্তা করে না। বা হয়তো পারেই না!
To comment as guest, click on the field "Name". The option to do so will become visible.
লগইন ছাড়াই কমেন্ট করতে নাম এ ক্লিক করুন, দেখবেন তার নিচেই আছে অতিথি হিসাবে কমেন্ট করার অপশন।