আঙ্গুল, দুর্ঘটনা, জীবন, ক্রোমবুকের ফালতু আর ওয়াকমের অসাধারণ স্টাইলাস
দুর্ঘটনা যেভাবে হলো
কয়দিন আগে উড়াধুরা একটা দুর্ঘটনা ঘটলো। ঘরের কিছু জিনিষ পত্র নাড়াচাড়া করছিলাম, হঠাৎ দেখি একটা জিনিষ পড়ে যাচ্ছে। বাম হাতে ধরতে গেলাম, টের পেলাম যে প্রায় ধরতে পেরেছি - কিন্তু দেখি আঙ্গুল গলে পড়ে গেল।
তারপরে আঙ্গুলের দিকে দিকে তাকিয়ে দেখি আঙ্গুলের মাথা উধাও - ঝর ঝর করে রক্ত পড়ছে। প্রথমেই রক্ত জমাট বাধার পাউডার স্প্রে করলাম - দেখি তাও থামে না। পেপার টাওয়েল আর কাপড় দিয়ে প্রিয়া ব্যান্ডেজ করে দিলো - দেখি মুহূর্তেই পেপার টাওয়েল আর কাপড় ভিজে গেলো। প্রিয়ার ভাষায়, জ্যন্ত মুরগী কাটলে যেভাবে রক্ত পড়ে ওভাবে রক্ত পড়ছিলো।
যন্ত্রটার নাম ম্যান্ডালিন। সাধারণত সালাদ বানানোর জন্য হাবিজাবি কুচিকুচি করতে ব্যবহার করা হয়। আমি ছোটবেলায় রান্নাবান্নার অনুষ্ঠানে দেখতাম এটা দিয়ে রাধুনীরা ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে সব তৈরি করে ফেলে - সেই রকম ভেবেছিলাম আমিও করবো। প্রিয়া অবশ্য না করেছিল কেনার আগে, কিন্তু আমি কথা না শোনায় আমার আঙ্গুলও ঘ্যাচাং হয়ে গেলো আরকি। তাও অল্পের উপরে গেছে - জিনিষটা এত ধাড়ালো যে হাতের মাঝে বা অন্য কোথাও লাগলে যে কি হতো কে জানে!
যাই হোক, কপাল ভালো তখন বাসায় তানজিব ভাই আসছিলেন। উনি ফোন টোন দিয়ে ভার্সিটির হসপিটালে নিয়ে গেলেন। বেচারারা তখন মাত্র সব গুছাচ্ছে; প্রায় ৫টা বাজে - তখন আমি এই রক্তাক্ত হাত নিয়ে উপস্থিত।
ডাক্তাররা প্রথমেই চেষ্টা করলেন রক্ত থামাতে - চেপে রাখলে মিনিট বিশেক অনেক সময় রক্ত বার হওয়া থেমে যায়, সেই থামাথামির নাম নাই। আবার রক্ত বার হওয়া শুরু করে। আবার এমন ভাবে কেটেছে যে সেই মাথাও নাই, সেলাই করে থামানোর জো নেই। ডাক্তার বললো, অমিত - বুঝতেছোই তো অবস্থা। আমরা এখানে চার যায়গা থেকে রক্ত বার হতে দেখছি, মিনি ধমনীর মতো। এগুলো এখনো পুড়িয়ে না দিলে রক্ত বার হতেই থাকবে। আমি উদাস মনে বললাম - কী আর করা। আপনি ডাক্তার, যা করার করেন। ডাক্তার পটাং পটাং করে সিলভার নাইট্রেট দিয়ে আঙ্গুলের চার যায়গায় পুড়িয়ে দিয়ে আবার প্রেসার দিয়ে রাখলো। এমনেই কাঁচা মাংস বার হয়ে আছে, তার উপর আঙ্গুলের মাথা মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি অনুভূতিসম্পন্ন। সুতরাং ডাক্তার যখন এহেন অনুভূতিপ্রবণ যায়গায় পর পর চারবার ছ্যাকা দিলো, আমারও পুরো শরীরে মনে হচ্ছিলো আগুন লেগে যাচ্ছে কিছুক্ষনের জন্য।
যাই হোক, এটা মোটামুটি এক মাস আগের কাহিনী। আঙ্গুলের চিকিৎসা এখনো চলছে, এখনো আঙ্গুলটা ব্যবহার করতে পারি না। কিন্তু এই এক মাসে অনেক কিছু শিখেছি।
যা যা শিখেছি
১) মানুষের শরীর মারাত্মক রকম ব্যালান্সড। এমনিতে টের পাওয়া যায় না, কিন্তু একটা আঙ্গুল বাঁচিয়ে কিছু ধরা, তোলা, ঘুরানো মারাত্মক কঠিন। আঙ্গুল না থাকলে সেটা আরেকটা পরিস্থিতি, কিন্তু থাকা অবস্থায় ব্যবহার না করে বাকি সব করা অনেক কঠিন।
২) কীবোর্ডে টাইপ করা আরো কঠিন। এখন তর্জনী আর মধ্যমা, দুই আঙ্গুলের কাজই মধ্যমা দিয়ে করা লাগছে। সমস্যা হচ্ছে এতে মধ্যমার উপর চাপ বেশি পড়ে, একটু পর ব্যথা করে মধ্যমা, তার পরে পুরো হাতটাই!
৩) আমার এডভাইজররা অনেক ভালো; শুনেই বলে কাজ টাজ সব বাদ। তুমি যতো খুশি ছুটি নাও, বিশ্রাম নাও। কাজটাজ নিয়ে চিন্তা করা লাগবে না। অবশ্য এক এডভাইজর খেপাইছে, ধারালো জিনিষ কেন আমি ধরতে গেছি পড়ার সময় সে বিষয়ে। কিন্তু সেই খেপানোটা আমাদের হাহাহিহির অংশ, এই সব চলেই আমাদের ভিতরে।
৪) অনেকেই মনে করে কোন যায়গায় কেটে গেলে সেটা শুকনা রাখতে হয় তাড়াতাড়ি সুস্থ হবার জন্য। ডাক্তার আমাকে বলেছিলো দিনে তিনবার ইপসাম লবন কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে চুবাতে তিন বেলা। এর কারণ দুইটা, একটা হলো ইপসাম দ্রবণ ইনফেকশন হতে দিবে না, আরেকটা হলো যখন ঘা শুকাবে - সেটা শক্ত হবে। শক্ত চামড়া ফেটে যায়, তখন আবার সেটা জোড়া লাগাতে গিয়ে সময় বেশি লাগে, শক্তি বেশি খরচ হয়। একারণে শুকনো রাখার বদলে ভেজা রাখা ভালো। এগুলো নিয়ে দশক কয়েক আগে গবেষণাও হয়েছে! তবে নিজে নিজে করতে যাবেন না আবার, ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে ঘাঁ পঁচে বড় ইনফেকশন হতে পারে!
যে কারণে ক্রোমবুক, স্টাইলাসের দিকে যাওয়া
যাকগে, সবমিলিয়ে মনমরা লাগে। কাজ সব তো কম্পিউটরে, গেমও, লেখালেখিও। কীবোর্ডে ধীরে সুস্থে টাইপ করা লাগে বলে আরো মেজাজ খারাপ লাগে। হঠাৎ মনে পড়লো, আমার তো একটা ক্রোমবুক ২ ইন ১ আছে, মানে এটা চাইলে ল্যাপটপ হিসাবে ব্যবহার করা যায়, বা ভাজ করে ট্যাবলেট হিসাবেও। ক্রোমবুকে আবার এন্ড্রয়েডের সব অ্যাপ চলে, আর আমার মডেলটার সাথে একটা স্টাইলাসও আছে। সবমিলিয়ে তো একহাতেই সব পড়াশুনা লেখালেখি করতে পারবো!
চালু করলাম, আপডেট সব ইন্সটল করলাম। দেখি স্টাইলাস এর অবস্থা তথৈচব। ব্যাটারি পাল্টালাম, পরিষ্কার করলাম, যেই কে সেই। কী করা যায় জিজ্ঞাসা করি রেডিটে, কেউ কিছু বলেও না। শেষে মনে পড়লো, আমার তো একখানা লেখার/আঁকাআঁকির ট্যাবলেটও আছে, ওয়ান বাই ওয়াকম নাম। এই ট্যাবলেটটা আবার সেই মজার। দাম কম, পিচ্চি সাইজ, কিন্তু প্রেসার সেনসিটিভ স্টাইলাস আছে, সেই স্টাইলাসে আবার ব্যাটারিও লাগে না। এইটা আমি ক্রোমবুকে লাগিয়ে মুগ্ধ। ক্রোমবুকে আলাদা করে ওয়াকমের সাপোর্ট দেয়া আছে বলে ট্যাবলেট টা দুর্দান্ত চলে। বিশেষ করে xodo নামের একটা এন্ড্রয়েড অ্যাপ আছে; ওটা আর ওয়াকম ট্যাবলেট ব্যবহার করে পিডিএফ এ নোট করা বা পড়ার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। সব পিডিএফ থাকে গুগল ড্রাইভে, সেগুলো আবার জোটেরোতেও (রেফারেন্স বা সাইটেশন ম্যানেজার) রাখা। সব মিলিয়ে যা নোট লিখি বা করি সব অন্য ডিভাইসেও পাওয়া যায়।
সব মিলিয়ে ভালোই একটা সেটআপ হয়ে গেছে। :)
এর মানে অবশ্য এই না যে ট্যাবলেট ক্রোমবুক থাকাই লাগবে পেপার পড়তে, বা Xodo ই ব্যবহার করা লাগবে। আমি অনেক খুঁতখুঁতে, এ কারণে এইগুলোতে থিতু হয়েছি। নাহলে এডোবি এর পিডিএফ রিডার (অনলাইন আর এন্ড্রয়েড দুইটাই), ফক্সইট - এগুলোও চমৎকার। Xodo ব্যবহার করেছি কারণ এটা আমার আঙ্গুল আর স্টাইলাস আলাদা করতে পারে, সেকারণে বার বার কাজের মাঝে স্ক্রল করা আর নোট লেখার জন্য আলাদা করে কিছু করা লাগে না।
এইতো!
To comment as guest, click on the field "Name". The option to do so will become visible.
লগইন ছাড়াই কমেন্ট করতে নাম এ ক্লিক করুন, দেখবেন তার নিচেই আছে অতিথি হিসাবে কমেন্ট করার অপশন।