ডিগ্রি, স্বীকৃতি আর বাংলাদেশ

Written on July 27, 2020

অনলাইন সার্টিফিকেট অর্জন নিয়ে তো বেশ কিছু আলাপ দেখছি, দেখে দুইটা প্রায় সম্পর্কহীন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

বছর খানেক আগে বাংলাদেশে কোন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে গেছি, সেখানে দেশের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোষ্ঠ শিক্ষকরাও ছিলেন। তা সেই ইভেন্টে একজন “ইন্ডাস্ট্রি সাইডের” বক্তা, তার কথাবার্তা শুনে একটু কেমন কেমন জানি লাগছিলো। নামের আগে ডঃ লাগানো, কিন্তু কথাবার্তা মিলে না - ভাবলাম বাসায় এসে ঘেঁটে দেখি।

যাচ্চলে, ভদ্রলোকের ডিগ্রি দেখি আমেরিকার কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমি কি তবে ভুল করলাম? তারপরে বিশ্ববিদ্যালয় ঘাঁটতে গিয়ে দেখি বিশ্ববিদ্যালয়টা “অল্টারনেটিভ এডুকেশন” এ বিশ্বাসী, অনলাইনে ক্লাস নেয়। এক্রেডিটেশন (মানে আপনি চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে পারেন, কিন্তু সেটা ভুয়া নাকি ভালো সেটার স্বীকৃতি) নাই তো নাই, তার উপরে দেখি টেক্সাস শিক্ষাবোর্ডের ফ্রড বা ভুয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম জ্বলজ্বল করছে।

আমার মাথা ঘুরে গেলো। ঘটনা যখনকার, তখন আমি শিক্ষক হিসাবে নিতান্তই নতুন। আমার সন্দেহ হলো, সন্দেহের ভিত্তিও প্রমাণিত হলো - কিন্ত তাহলে বাকি এই দেড় ডজন জ্যোষ্ঠ শিক্ষকেরা কিছু টের পেলেন না? বা টের পেলে সেই বক্তব্যগুলো নিয়ে কিছু বললেন না? বা এই ইভেন্ট আয়োজনকারীরাও ব্যাকগ্রাউন্ড চেক না করেই বক্তাকে পদ দিয়ে দিলেন? সর্ষের মাঝে ভূত বুঝলাম, ওঝাই আবার সর্ষেতে ভূত মেশাচ্ছে নাকি? যাকগে, এর পরে এটা নিয়ে বিস্তর চেঁচামেঁচি করেছি ভিতরে ভিতরে, কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তার পরে কি হয়েছে আর জানি না।

দ্বিতীয় ঘটনাটা ভ্যাকসিন নিয়ে। দেখি নামের পাশে ডাঃ লাগানো, ভ্যাকসিন আর ইম্যুনিটি নিয়ে কি কি জানি চটকদার আলাপ করছেন ফেসবুকে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রোফাইলে, সবখানে নিজের পেজের পোস্ট শেয়ার করছেন। ভদ্রলোকের তথ্য ঘেঁটে দেখি ইনার আমেরিকান ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়ও অনলাইন, কিন্তু আবার এক্রেডিটেশন আছে। কিন্তু এক্রেডিটেশন প্রতিষ্ঠানটাই ভুয়া! যেন বলতে পারে এক্রেডিটেশন আছে সেজন্য এসব ভুয়া এক্রেডিটেশন প্রতিষ্ঠান বানানো হয়েছে।

সুতরাং সুতরাং, ডিগ্রি দেখেই ভাবার দরকার নাই যে সেই ডিগ্রিটা ভালো। আগে দেখেন কোথাকার ডিগ্রি। ডিগ্রির উৎস দেখার পরে ভালো মানুষ নাকি, ডিগ্রিধারী হলেই শিক্ষিত নাকি এইসব দর্শনচিন্তা করা যেতে পারে।

আরো ভালোভাবে বললে, আমার মতে কেউ ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে, বিসিএস এ টিকলে, বা ডিগ্রি পেলেই তাকে মাথায় তোলার দরকার নাই। সেগুলো অবশ্যই অর্জন, অনেক কষ্টের ফসল - কিন্তু তারা এসব কাজে লাগালেই মাথায় তোলা যেতে পারে।

আপনি পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেরা ডিগ্রি নিয়ে বাসায় বসে থাকলেন, আপনাকে অভিবাদন জানানোর সময় হয়নি।

সময় তখন হবে যখন আপনি সেই অর্জিত জ্ঞান ছড়াবেন, কাজে লাগাবেন।

সূত্র