প্রফেসরকে প্রথম ইমেইল - এই ভুলগুলো করলেই (প্রায়) শ্যাষ!
উইলিয়াম মেরিতে আছি তিন বছর পূর্ণ হবে কয়েক মাস পরে।
এই সময়ে Ph.D. এর জন্য এপ্লিকেশন করা অনেকের সিভি মাঝে মধ্যেই আমার সুপারভাইজিং প্রফেসররা সহ অন্য প্রফেসররাও দেখতে দিয়েছে। সেসব থেকে, পাশাপাশি টুইটার বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে একাডেমিক লোকজনদের আলাপ থেকে বেশ কিছু ভুলের ব্যাপারে শুনেছি বা শিখেছি যেগুলো না জানলে করা খুবই সহজ।
এগুলো করার কারণে প্রফেসররা বেজায় নাখোশ হতেও পারে, নাও হতে পারে। নির্ভর করছে তার মেজাজমর্জির উপরে। কিন্তু আপনি কেনই বা হুদাই সম্ভাবনা তৈরি করবেন তাঁকে চটাবার? পঁচা শামুকে পা কাটুক এটা কে চায় বলুন?
সেজন্যই এই লেখাটা। প্রতিটার জন্য একটা করে রেটিং ১-৫ এর ভিতরে, যেখানে ৫ মানে সবচেয়ে খারাপ:
অপেশাদার বা উদ্ভট ইমেইল এড্রেস
এটা দেখে স্প্যাম বক্সে পাঠিয়ে দিতেই পারে যে কেউ, ইমেইল না পড়েই। কাজেই চেষ্টা করুন আপনার নাম, বা নামের সাথে প্রতিষ্ঠান যোগ করে ইমেইল এড্রেস তৈরি করতে। যেমন আমার প্রাতিষ্ঠানিক ইমেইল এড্রেস পাবার আগে ছিলো ইউজারনেম ছিলো amit.iitdu
। সাথে যেন আপনার নামটাও একাউন্টে ঠিক মতো থাকে।
ইমেইল ট্র্যাকার ব্যবহার করা
যে কোন প্রফেসরের মেজাজ বিগড়ে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। ইমেইল ট্র্যাকার মানে আপনি তার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চাইছেন, তার অনুমতি না নিয়েই। বাংলাদেশে আমরা হাহাহিহি করে মজা করতে একসময় ট্র্যাকার লাগাতাম, আমিও লাগিয়েছি - কিন্তু বিদেশে এটা খুবই উৎকট, নাক গলানো অভ্যাস মনে করা হয়।
আপনি ইমেইল পাঠিয়েছেন ভালো কথা, আমি কখন পড়বো না পড়বো আমার “ব্যক্তিগত” ব্যাপার, আপনি ট্র্যাকার লাগাইলেন ক্যান?
কপি পেস্ট করে একই ইমেইল পাঠানো সবাইকে
প্রফেসররা দৈনিক যদি ১০টা ইমেইল পায়, তার মাঝে আপনারটা থাকে একদম সাধারণ যেটা সবাইকে পাঠানোর মতো, কিন্তু সেই প্রফেসরের কাজের সাথে কোনই সম্পর্ক নাই, সেক্ষেত্রে আপনারটা গুরুত্বের হিসাবে ১০ নাম্বার হবে তাতে আশ্চর্যের কি আছে!
ব্যক্তিগত প্রোফাইলে হানা দেয়া
অনেকে আছে ছুটির দিন (যেমন বাংলাদেশ সময়ে শুক্রবার সকালবেলা) প্রফেসরকে ইমেইল করবে। তারপরে দুইটা দিন অপেক্ষা করে রবিবার আবার ইমেইল করবে। তারপরেও উত্তর না পেলে পরেরদিন ফেসবুক টুইটার এসব খুঁজে বার করে সেখানে ব্যক্তিগত বার্তা দেয়া শুরু করবে।
এই এপ্রোচে কয়েকটা সমস্যা আছে। প্রফেসররা নিতান্ত জরুরী না হলে কোন ইমেইল ৪৮ ঘন্টার আগে দেখবে না ধরে নিন, তার পরেও দেখত পারে। ধরে নিন সবাই কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা করে রাখে। কাজেই শুক্রবারের ইমেইল তারা রবিবারের ভিতর দেখবেও না, গুনবেও না। ৪৮ ঘন্টা গোনা হবে শনি আর রবিবার বাদ দিয়ে, সেইভাবে হিসেব করা লাগবে। আর আপনি ব্যক্তিগত বার্তা দিলে তারা বেজায় বিরক্ত হবে, কারণ আপনি প্রফেশনাল বাউন্ডারি মানছেন না।
অন্তসারবিহীন ইমেইল করা
প্রফেসরদের ইমেইল করবেন ভালো কথা, আগে দেখুন প্রফেসর কি নিয়ে কাজ করে, আপনার সেরকম কাজ করতে ভালো লাগে নাকি, অভিজ্ঞতা আছে নাকি। সেটা না করে আপনি যদি ইমেইল করেন টেম্পলেটের মতো: “আমি তোমার কাজ ভালো পাই, আমাকে নাও” তাহলে প্রফেসররা আপনাকে আলাদা দৃষ্টিতে দেখবে না তা বলাই বাহুল্য। তার কাজ নিয়ে পড়াশুনা করে দেখুন, সেটায় কি কি উন্নতি করা যায় বা আর কিছু যোগ করা যায় সেটা নিয়ে ঘাটুন। তারপরে সেটা নিয়ে আপনি আলাপ করতে ইমেইল করুন। এভাবে আলাপ করতে করতে আপনার বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতা থাকলে প্রফেসরই আপনাকে পেতে অস্থির হয়ে যাবেন।
আমার মতে সাধারণত এ রকম ইমেইলে যা যা দেখতে চাইবে তারা, তা হলো:
- সে কী কাজ করে সেটা বুঝেছেন
- যে কাজে সমস্যা আপনি ধরেছেন বা পেয়েছেন তা আপনি ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেন
- কী ভাবে সে সমস্যার সমাধান করবেন সে বিষয়ে পরিকল্পনা ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারেন
- সেই সমাধানে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং সেগুলো কীভাবে সমাধান করবেন সেই পরিকল্পনা
আপনি যেহেতু পিএইচডি করছেন না এখনো, বা তার সাথে সরাসরি কাজ করেন নাই, কাজেই আপনার পরিকল্পনাই ভূল থাকতেই পারে। সেটা কোন ব্যাপার না! মূলত তারা যা দেখতে চাইবে তা হলো আপনি সমস্যাটা বুঝে সেটা সমাধানের পথে আগাতে পারেন নাকি সেটা, সেই সমাধানটা দিনশেষে ভূলও হতে পারে। প্রক্রিয়াগুলো বা পদ্ধতিগুলো ঠিকমতো জানেন দেখাতে পারলে বাকিটা তারাই আপনাকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিবে। 😁