ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিকেশন গ্রান্ট নিয়ে আলাপ-সালাপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অতি সম্প্রতি খুবই ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে গবেষণার জন্য - পাবলিকেশন এর বা ওপেন একসেস এর খরচ ঢাবি দিবে! উদ্যোগটা ভালো হলেই যে সেটার বাস্তবায়ন ভালো হবে তা অবশ্যি না। আসুন ভেঙ্গে দেখি এটায় কী কী আছে। অনুদানের বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে পারবেন ঢাবির এই পেজে।
১
SCImago Journal (https://www.scimagojr.com/) অথবা Web of Science (https://mjl.clarivate.com/home) ওয়েবসাইট-এ সংশ্লিষ্ট জার্নালের নাম উল্লেখ থাকতে হবে।
পাবলিকেশন এর ভিতরে জার্নাল পাবলিকেশন এর সাথে টপ-টিয়ার কনফারেন্সের ফুল পেপার পাবলিকেশনও ধরা উচিৎ।
যেমন কম্পিউটার সায়েন্সে আমি আমেরিকায়, ইউরোপে, ইউকেতে জার্নাল পাবলিকেশন করে হয়তো পিএইচডি করতে পারলেও ভালো পিএইচডির জন্য ধরবে শুধুমাত্র টপ-টিয়ার কনফারেন্সগুলো। পৃথিবীর বাকি সব যায়গায় মানুষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বা সিকিউরিটি এর টপ-টিয়ার কনফারেন্সে ফুল পেপার পাবলিশ করে প্রমোশন, পিএইচডি পেলেও ঢাবিতে প্রমোশন বা অনুদানের শর্তে কনফারেন্স গোনাতেই ধরে না কেন সেটার ব্যখা আমি আজও জানি না।
এক্ষেত্রে ২ নং শর্তে ঘ) হতে পারে এমন:
প্রস্তাবনা: “ঘ) কম্পিউটার বিজ্ঞান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং ও সংলগ্ন বিষয়ের জন্য কনফারেন্সের CORE (http://portal.core.edu.au/conf-ranks/) র্যাংক নূন্যতম B হতে হবে এবং কনফারেন্সটি DBLP/SCImago/Web of Science এ ইনডেক্সড হতে হবে।”
সর্বোচ্চ তিনটা র্যাংক যথাক্রমে A*, A, এবং B;
২
প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক পাণ্ডুলিপি (Manuscript) গৃহীত হলে Publication Fee/Open Access Fee-র জন্য শুধু First Author/Corresponding Author আবেদন করতে পারবেন। আবেদনকারীকে অবশ্যই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হবে এবং উক্ত প্রবন্ধের লেখকবৃন্দের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হবে। তবে লেখকবৃন্দের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক/শিক্ষার্থী থাকলে এ শর্ত শিথিলযোগ্য।
শিক্ষার্থীদের জন্য এটা খুবই ভালো খবর!
একটা প্রচলিত অভিযোগ ছিলো এমন: প্রকাশনার সাথে জড়িত খরচ পেতে হলে শিক্ষককে First/Corresponding অথর হতে হবে। একারণে খালি খরচ পাওয়ার জন্যও শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে শিক্ষকদের ফার্স্ট অথর হতে হতো। সে হিসাবে শিক্ষার্থীদের জন্য এটা খুবই ভালো খবর!
তবে এভাবে ৫০% এর শর্ত দিয়ে কোলাবোরেশন শুরু করা যায় না।
আমরা যে র্যাংকিংগুলো নিয়ে মাথা ঘামাই, সেসব র্যাংকিং এর একটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর একাডেমিক রেপুটেশন বা খ্যাতি। আর এই খ্যাতি তৈরি হবার সবচেয়ে সহজ রাস্তাগুলোর একটা কোলাবোরেশন করা। তা আমি খ্যাতি চাইবো, কিন্তু কোলাবোরেশন করার সময় শর্ত বসাবো - এ আবার কেমন কথা!
৩
ক) বিজ্ঞান অনুষদ, জীববিজ্ঞান অনুষদ, ফার্মেসী অনুষদ, আর্থ এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদ, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি অনুষদ এবং বিজ্ঞানভিত্তিক ইনস্টিটিউটসমূহের ক্ষেত্রে জার্নালের ন্যূনতম Impact Factor ২.০ হতে হবে। …
গুড গুড, খালি ইনডেক্সড (মানে সার্চ করে পাওয়া যাবে) হলেই হবে না, ইমপ্যাক্টও থাকা লাগবে।
First Author/Corresponding Author বছরে একবার এই আর্থিক অনুদান পাবেন। তবে গ্র্যান্ট প্রাপ্ত প্রকাশনার Impact Factor ২(ক)-এর ক্ষেত্রে ৩.০ বা তদুর্ধ্ব এবং ২(খ)-এর ক্ষেত্রে ২.০ বা তদুর্ধ্ব হলে বছরে এই অনুদান সর্বোচ্চ দুইবার দেওয়া যেতে পারে।
আদর্শ ক্ষেত্রে যত পাবলিকেশন তত অনুদান হলে ভালো হতো। তবে এটা শুরু হিসাবে ভালো।
৪
প্রবন্ধ প্রকাশনার প্রকৃত ফি (Actual Fee) বা সর্বোচ্চ ২০০০ (দুই হাজার) মার্কিন ডলার প্রকাশনা অনুদান দেওয়া হবে। প্রকাশনার জন্য জার্নাল/প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃপক্ষ হতে Publication Fee/Open Access Fee প্রদানের ক্ষেত্রে ছাড় (Waiver) পাওয়া গেলে এই আর্থিক অনুদান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
এহেম, উহুম, হেহে। পৃথিবীর সবচেয়ে বনেদী জার্নালগুলোর একটা - ন্যাচারে মনে হয় ওপেন একসেস এর জন্য ১১ হাজার মার্কিন ডলারের কাছাকাছি লাগে। বাকি টাকা নিজের পকেট থেকে দিতে গেলে অবস্থা খারাপ! অবশ্য আমি কম্পিউটার সায়েন্সের মানুষ, ন্যাচার জার্নাল নিয়ে অত বেশি জানি না। হয়তো গরীব দেশের গবেষক হিসাবে কিছু ছাড় পাওয়া যেতে পারে!
বাকিগুলো খুবই প্রচলিত শর্ত নানা দেশের সাপেক্ষে, সুতরাং সেগুলো নিয়ে বলার কিছু নেই।
পরিশেষে
সবমিলিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ভালো গবেষণায় প্রধান বাঁধাই হলো ফান্ডিং এর অপর্যাপ্ততা। আগে চিন্তায় পড়ে যাওয়া লাগতো গবেষণা করার পরে সেটা পাবলিশ করার টাকা কই পাওয়া যাবে। সে হিসাবে এটা ঢাবির শিক্ষার্থীদের এবং শিক্ষকদের জন্য জীবন অনেকখানি সহজ করে দিবে। 😄